প্রকৃতি ও সমাজ অনুসন্ধান

নবম শ্রেণি (মাধ্যমিক ২০২৪) - ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান - History & Social Science - | NCTB BOOK
65
65

 

প্রকৃতি ও সমাজ অনুসন্ধান

এই শিখন অভিজ্ঞতায় আমরা প্রথমে নিজ এলাকার কয়েকটি প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান নির্ণয় করব। এরপর দুটো ভিন্ন ভূ-প্রকৃতি ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট নির্ণয় করে বিশ্লেষণ করব। প্রেক্ষাপট দুটোর উপর প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের প্রভাব চিহ্নিত করব। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুসন্ধান করার পদ্ধতি সম্পর্কে জানব। এরপর আমরা নিজ এলাকার ইতিহাস ও সামাজিক প্রেক্ষাপট তৈরিতে প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের প্রভাব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে অনুসন্ধান করব। অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফল একটি সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে উপস্থাপন করব। এরপর মুক্ত আলোচনায় শিক্ষক ও সহপাঠীর কাছ থেকে মতামত নিয়ে এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান সংরক্ষণে মানুষের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে করণীয় নির্ধারণ করব। চলো, আমরা আমাদের এলাকার কয়েকটি প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান নির্ণয় করে নিচের ছকটি পূরণ করি। কাজটি করব আমরা দলগতভাবে।

দলগত কাজ ১

 

আমরা ৫ থেকে ৬ জনের একটি দল গঠন করি। আমরা খেয়াল রাখব যেন দলের সবাই একই এলাকার অধিবাসী হয়। দলে আলোচনা করে আমরা নিজ নিজ এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদানের ছকটি পূরণ করি।

আমার এলাকার প্রাকৃতিক উপাদানআমার এলাকার সামাজিক উপাদান

 

 

 

 

 

 

প্রকৃতি ও সমাজের প্রভাব

আমরা এখন বাংলাদেশের দুটি ভিন্ন ভৌগোলিক ও সামাজিক বৈশিষ্ট্যের দুজন মানুষের গল্প পড়ি। এই দুটি গল্প থেকে আমরা দুটি ভিন্ন অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান নির্ণয় করব। এই দুটি অঞ্চলের ঐতিহাসিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট খুঁজব।

সমুদ্রে মাছ ধরায় ব্যস্ত জেলেরা

সমুদ্রের বুকে জব্বার হোসেন

জব্বার হোসেনের জন্ম সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায়। সমুদ্রে মাছ ধরে এবং হাটে মাছ বিক্রি করেই তার জীবন চলে যায়। বাড়িতে আছে স্ত্রী ও তিন সন্তান। জব্বার হোসেন স্বপ্ন দেখেন তার সন্তানেরা পড়াশোনা করে শিক্ষিত হবে। হাঁট বাজারে মাঝে মাঝে শহর থেকে আসা মানুষদের দেখতে পান। তারা মাছ কিনে নিয়ে যান। তাদের ভাষাও জেলেদের মতো না। দাদার কাছ থেকে শুনেছেন, এখানে নাকি একসময় জাহাজও আসত। এখান থেকে লবণ, জামাকাপড় এসব জাহাজে করে বিভিন্ন দেশে নিয়ে যেত। জাহাজে বিদেশি মানুষেরাও আসত। শহরের লোকেরা অনেক সময় শার্ট, প্যান্ট ও কোট পরে আসে। তা জব্বার হোসেনের ভালো লাগে। স্ত্রীকে জানান এবার কিছু টাকা জমলে দর্জির কাছ থেকে শার্ট, প্যান্ট, কোট বানিয়ে নিবেন। তার এই কথা শুনে স্ত্রী হাসেন। এই জামাকাপড় পরে আপনি কই যাবেন? জব্বার সাহেব ভাবেন সত্যিই তো এটা পরে তিনি কোথাও যেতে পারবেন না। এমনকি এই পোশাকে তিনি সমুদ্রেও ঝাঁপ দিতে পারবেন না। তিনি বুঝলেন, না লুঙ্গির মতো আরামদায়ক পোশাক আর কোনোটাই হয় না। একটু গুঁজে দিলেই হলো, কাজে লেগে পড়া যায়। আবার ভিজে গেলে বাতাসে খুব তাড়িতাড়ি শুকিয়েও যায়। 820 platele জব্বার হোসেনের ছোটো ছনের ঘর মাঝে মাঝে সমুদ্রের ঝড়ে ভেঙে যায়। এগুলো ঠিক করতে তখন বেশ কষ্ট করতে হয়। তারপরও আগের চেয়ে অবস্থা এখন অনেক ভালো। মায়ের কাছ থেকে শোনা এক সময় নাকি বড়ো বড়ো ঝড়ে অনেক মানুষ মারা যেত। এরকমই এক ঝড়ের সময় মা তার এক ছোটোবোনকে হারিয়েছেন। এখন সমুদ্রে এরকম বড়ো ঝড়ের আশঙ্কা হলে তারা বিপৎসংকেত পান। স্ত্রী সন্তান নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেন।

জব্বার হোসেনের জীবন যেন এই সমুদ্রেই। সন্তানরা যেখানেই যাক তিনি এই সমুদ্রেই মরতে চান। মাঝে মাঝে সমুদ্রের পানির উপর মাছের ট্রলারে গা ভাসিয়ে দিয়ে জোরগলায় গান ধরেন।

বিয়ের সাজে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে অন্বেষা

আজ অন্বেষার বিয়ে

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে বড়ো হয়েছে অন্বেষা সাংমা। চারিপাশে গাছপালা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ সব সময় তাকে আগলে রেখেছে। আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে নিজেই চিনতে পারছে না। বেশ সেজে ফেলেছে আজ। নিজের রুমটি পরিপাটি ঘরে গুছিয়েছে। পুরোনো কিছু জিনিসপত্রও সরিয়েছে। বিয়ের পর স্বামীকে নিয়ে উঠবে এখানেই। বাড়িভর্তি মানুষ। সবার আগ্রহ নতুন বরকে দেখার। তাছাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনরা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিয়ের অনুষ্ঠানে গান ও নাচ পরিবেশন করবে। বিভিন্ন খাবারের আয়োজনও করা হয়েছে। কিন্তু অন্বেষা কেন যেন সবার মতো মজা করতে পারছে না। চিন্তা হচ্ছে নতুন জীবনের সব কিছু কীভাবে শুরু করবে? হঠাৎ মা অন্বেষার ঘরে ঢুকে বললেন, নতুন জামাইকে বাইরে কাজ করতে হবে। তাদের জমিজমা দেখেশুনে রাখতে হবে। তাই বিয়ের পরদিনই মেয়ের জামাইকে নিয়ে তিনি চাষাবাদের সম্পত্তি দেখিয়ে দিতে চান। অন্বেষার একটু রাগ হলো। মাকে একটু কড়া করেই বলল, মা একজন মানুষ প্রথম আমাদের সঙ্গে এসে থাকবে। বিয়ের পরদিনই তুমি তাকে কাজে পাঠিয়ে দেবে মায়ের উত্তর, কী করব বলো আমার সব সম্পদই তো তোমার। তুমি যদি বরকে পরিশ্রমী না করে তোলো, বর তো আলসে হয়ে যাবে। অন্বেষা মায়ের কথা মেনে নিল। তারপর কথা ঘুরিয়ে বলল, মা কেমন লাগছে আমাকে? মা এবারও কিছুটা মলিন দৃষ্টিতে বললেন, আমি ভেবেছিলাম তুমি দকমান্দা (ঐতিহ্যবাহী পোশাক) পরবে। অন্বেষা বলল, মা এখন তো তেমন কেউ এই পোশাকে বিয়ে করে না। মা বললেন, আমি ভেবেছিলাম তুমি সবার মতো না। অন্বেষা বলল, মা আমি সামনের

সবগুলো অনুষ্ঠানে দকমান্দা পরব। বিয়ে তো একবারই হয়, এই একটা দিন আমার মতো করে একটু সাজি। মা আর কিছু না বলেই চলে গেলেন।

অন্বেষার অনেক দিন পর আজ কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে। তার একটি ডায়েরি আছে, সেখানে তার বিশেষ মুহূর্তগুলো লিখে রাখে। কিন্তু যখনই লিখতে বসে, তার নিজের ভাষায় লিখতে পারে না। কারণ, গারো ভাষার লেখার জন্য বর্ণমালা নেই। আহা! যদি নিজের ভাষায় লেখা যেত। তারপরও সে লিখবে যে ভাষা স্কুলে, কলেজে শিখেছে, সেই বাংলা ভাষাতেই। ডায়েরি খুলতেই অন্বেষার নানির কথা মনে পড়ছে। নানির অনেক ইচ্ছা ছিল তার বিয়ে দেখার। বিয়েতে রে-রে গানসহ নানা রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো। গারো সম্প্রদায়ের রীতি অনুসারে ভিন্ন গোত্রের ছেলেকে বিয়ে করতে হয়। মিন্টুও ভিন্ন গোত্রের।

ছোটোবেলায় অন্বেষা একদিন নানিকে জিজ্ঞেস করল, নানি তুমি নানাকে কী উপহার দিয়েছ বিয়েতে? নানি তাকে একটি আংটি দেখিয়ে বললেন এটা উপহার দিয়েছিলাম। অন্বেষা বললো, এটা তো অনেক সুন্দর। নানি বলল, তোমার বিয়েতেও তোমার বরকে এই আংটি দিলে কেমন হয়? সেদিন খুব লজ্জা পেয়েছিল অন্বেষা। আজ নানির দেওয়া সেই আংটি দিয়েই সে চার্চে বরকে গ্রহণ করবে তার জীবনে।

 

অনুশীলনী কাজ ১: আমরা জব্বার হোসেন ও অন্বেষা সাংমার জীবনের গল্প পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই সমুদ্র তীরবর্তী জেলে সম্প্রদায় ও গারো নৃগোষ্ঠীদের জীবনযাত্রা গড়ে উঠেছে ভিন্ন ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে। এই দুই সম্প্রদায়ের ইতিহাস, ভাষা, পোশাক, খাবার, উৎসব ইত্যাদিতে রয়েছে ভিন্নতা। এখন তাহলে আমরা উপরের দুটি গল্প এবং বই, পত্রিকা ইত্যাদি উৎস থেকে তথ্য নিয়ে নিচের ছকটি পূরণ করি।

প্রেক্ষাপট

সমুদ্র তীরবর্তী জেলে সম্প্রদায়

গারো নৃগোষ্ঠী

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

 

  

সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট

 

  
অনুশীলনী কাজ ২: জেলে সম্প্রদায় ও গারো নৃগোষ্ঠীর নিজ নিজ ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান কীভাবে প্রভাবিত করে, সে বিষয়টি শনাক্ত করে নিচের দুটি ছক পূরণ করি।

 

জেলে সম্প্রদায়

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট

প্রাকৃতিক উপাদান

 

  

সামাজিক উপাদান

 

  

 

গারো নৃগোষ্ঠী

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট

প্রাকৃতিক উপাদান

 

  

সামাজিক উপাদান

 

  

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জেলে সম্প্রদায়ের প্রাকৃতিক উপাদান সমুদ্র যার মাধ্যমে জাহাজে করে মালামাল দেশ-বিদেশে পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে এই সমুদ্র জেলেদের পেশা, ভাষা, গান ও উৎসব উদ্যাপনকেও প্রভাবিত করে। এভাবে প্রতিটি অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা ও ইতিহাস সেই অঞ্চলের প্রকৃতি ও সমাজের উপাদান দ্বারা প্রভাবিত।

আমরা এখন বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ধাপ অনুসরণ করে আমাদের চারপাশের মানুষের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান কীভাবে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে, তা জানার চেষ্টা করব। এ জন্য আমরা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতি সম্পর্কে জানব। এই পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করে আমরা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা শিখব। চলো, তাহলে আমরা এই পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপ সম্পর্কে জেনে নিই। এখানে আমরা নমুনাস্বরূপ নিজ এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন কীভাবে অনুসন্ধান করব তার বিভিন্ন ধাপগুলো দেখানো হলো।

বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতির ধাপ

ধাপ

ধাপটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা

উদাহরণ

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করাবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য বিষয়বস্তু নির্ধারণ করব।

আমার এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্ন তৈরি করা

 

বিষয়বস্তু সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের জন্য একাধিক প্রশ্ন তৈরি করব।

১. আমাদের এলাকার আগে রাস্তাঘাট কেমন ছিল? 

২. আমাদের এলাকার বর্তমান রাস্তাঘাট এখন কেমন?

তথ্যের উৎস নির্বাচন করা

 

বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য কোথা থেকে সংগ্রহ করতে পারি তা নির্বাচন করতে হবে।

এলাকার রাস্তাঘাটের আগের ও বর্তমানের অবস্থা। জানার জন্য এলাকার বয়স্ক লোক নির্ধারণ করব। আমরা কতজনের কাছ থেকে তথ্য নেব তা-ও নির্ধারণ করব। এ ছাড়া বই, জার্নাল, ম্যাগাজিন, মিউজিয়াম ইত্যাদি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারব।

 

তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি নির্ধারণ

 

তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা দলীয় আলোচনা/সাক্ষাৎকার /পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারি।এলাকার রাস্তাঘাটের পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করে সাক্ষাৎকার নেওয়ার পদ্ধতি নির্ধারণ করব
সময় ও বাজেট নির্ধারণঅনুসন্ধানী কাজ পরিচালনার জন্য আমাদের কোনো অর্থের প্রয়োজন আছে কিনা এবং কতটুকু সময় লাগতে পারে তা নির্ধারণ।

অনুসন্ধানী কাজ পরিচালনার জন্য কোনো অর্থের প্রয়োজন হবে কি না, তা নির্ধারণ করব। যদি অর্থের প্রয়োজন হয়, নূন্যতম কত টাকার মধ্যে আমরা অনুসন্ধানী কাজটি করব, তার একটি হিসাব তৈরি করব। অনুসন্ধানী কাজটি কত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করব তারও পরিকল্পনা করব।

 

 

তথ্য সংগ্রহ করা

এই ধাপে নির্বাচিত তথ্যের উৎস ও তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি অবলম্বন করে তথ্য সংগ্রহ করব।তথ্য সংগ্রহের সময় আমরা টেপ রেকর্ডার ব্যবহার বা খাতায় নোট করে রাখতে পারি। তবে অবশ্যই তথ্যদাতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েই এই কাজটি করতে হবে।

 

এলাকার রাস্তাঘাটের পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য নেওয়ার জন্য বয়স্ক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করব।

তথ্য বিশ্লেষণ করা

সংগৃহীত তথ্য পড়তে হয়, প্রয়োজনীয় তথ্যের মধ্যে যেগুলো প্রয়োজনীয় তথ্য তা নির্বাচন করতে হয় এবং সাজাতে হয় অথবা হিসাব নিকাশ করে গ্রাফ বা চার্ট আকারে প্রকাশ করতে হয়।

তথ্যদাতার প্রশ্নের উত্তরের মাধ্যমে তথ্য প্রদান করেন। তিনি অপ্রাসঙ্গিক অনেক তথ্য দিতে পারেন। তাই আমরা অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুর সঙ্গে প্রাসঙ্গিক তথ্য খুঁজে বের করে সাজাব।

 

ফলাফল ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ

তথ্য বিশ্লেষণ করে যে উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়, সেটাই অনুসন্ধানী পদ্ধতির ফলাফল। এই ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

আমরা আমাদের সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে এলাকার রাস্তাঘাট আগের ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে যে উত্তর পাব, সেটিই হচ্ছে আমাদের অনুসন্ধানী পদ্ধতির ফলাফল। এই ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব আমাদের এলাকার রাস্তাঘাটের কী রকম পরিবর্তন হয়েছে।

 

ফলাফল অন্যদের সঙ্গে উপস্থাপন ও শেয়ার করাআমরা আমাদের ফলাফল গ্রাফ পেপার, পোস্টার, নাটিকা, ছবি, চার্ট ইত্যাদি উপায়ে উপস্থাপন করতে পারি। এছাড়া ম্যাগাজিনে বা ক্লাসে প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে পারি।

আমরা আমাদের সংগৃহীত তথ্য থেকে এলাকার রাস্তাঘাট আগে কেমন ছিল এবং বর্তমানে কেমন সেটা তুলে ধরতে একটি ছোটো প্রতিবেদন লিখতে পারি। এছাড়াও ছবি এঁকে বা পোস্টারে লিখে বা ছোটো গল্প আকারে মৌখিক উপস্থাপন করতে পারি।

 

যে ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করব, তাঁকে তথ্যদাতা বা উত্তরদাতা বলা হয়। তথ্য সংগ্রহের সময় তথ্যদাতা বা উত্তরদাতার কাছ থেকে সম্মতি নিতে হয়। যদি তথ্যদাতার বক্তব্য আমরা রেকর্ড করি, তা-ও তাঁকে সাক্ষাৎকার গ্রহণের পূর্বে বলতে হবে। তাহলে চলো, আমরা তথ্য গ্রহণের সময় করণীয় কয়েকটি নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিই।

তথ্যগ্রহণের সময় করণীয়

১. অবশ্যই উত্তরদাতার কাছ থেকে সম্মতি নিতে হবে। 

২. যদি তথ্যদাতার কথা রেকর্ড করতে হয়, সেটার জন্য অনুমতি নিতে হবে। 

৩. তথ্যদাতার পরিচয় গোপন রাখতে হবে কিনা তা জেনে নিতে হবে। 

৪. তথ্যদাতাকে জানিয়ে রাখতে হবে সংগৃহীত উত্তর শুধু তাদের এই বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতিতে ব্যবহার করবে। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়। 

৫. কতটুকু সময় লাগতে পারে তা উত্তরদাতাকে জানাতে হবে। তিনি সেই সময় দিতে পারবেন কি না, তা জেনে নিতে হবে। 

৬. তথ্যদাতা যদি উত্তর দেওয়ার কোনো এক সময় উত্তর প্রদান করতে অনিচ্ছা প্রদর্শন করেন, সে মুহূর্তেই। প্রশ্ন করা বন্ধ করে দিতে হবে। 

৭. উত্তর দাতার উত্তর ঠিক না ভুল হয়েছে এ ধরনের কোনো কথা না বলা। যেন উত্তরদাতা সম্পূর্ণ নিজের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন।

প্রশ্নমালা তৈরি

তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রশ্নমালা তৈরি করা যেতে পারে। যেখানে নিজ এলাকার সামাজিক উপাদান আগে কেমন ছিল এবং সামাজিক উপাদান এখন কেমন, সে বিষয়ে প্রশ্ন থাকবে। নিচে কয়েকটি প্রশ্ন সংবলিত একটি প্রশ্নমালা দেওয়া হলো।

এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন 

১. আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট ৩০ বছর আগে কেমন ছিল? 

২. আমাদের এলাকার রাস্তাঘাট এখন কেমন? 

৩. এলাকার বাড়িঘর ৩০ বছর আগে কেমন ছিল? 

৪. এলাকার বাড়িঘর এখন কেমন? 

৫. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . 

৬.. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .

আমাদের তৈরি করা প্রশ্ন অনুসন্ধানের জন্য উপযোগী কি না, তা বোঝার জন্য আমরা নিচের ছকটি ব্যবহার করতে পারি। আমরা (√/x) চিহ্ন দিই।

প্রশ্ন

প্রশ্নটির উত্তর আমরা এখনো জানি না

 

প্রশ্নটির উত্তর জানার আগ্রহ আমাদের আছেপ্রশ্নের উত্তর পেতে কী করতে হবে, কার কাছে বা কোথায় যেতে হবে তা বুঝতে পারছিপ্রশ্নটির উত্তর পেতে যা করা দরকার তা আমরা করতে পারবনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রশ্নটির উত্তর খুঁজে পাওয়া সম্ভব
1  

 

 

  
2 

 

 

   

উপরের ছকে যদি সবগুলো কলামে টিক চিহ্ন হয়, তখন আমরা বুঝব আমাদের তৈরি করা প্রশ্নগুলো অনুসন্ধানের জন্য উপযুক্ত।

তথ্যে উৎস (তথ্যদাতা/উত্তরদাতা নির্ণয়)

 তথ্যদাতার নির্ণয়ের সময় লক্ষ্য রাখব: 

১. তথ্যদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম কি না। তিনি সেই বিষয় সম্পর্কে যথাযথভাবে জানেন কি না। 

২. আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে নিজ বয়স বা আয় সম্পর্কে তথ্যদাতা উত্তর দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। সেক্ষেত্রে আমরা সরাসরি তথ্যদাতার বয়স বা আয় জিজ্ঞেস না করে একটু কৌশলী হতে পারি। যেমন: অতীতের কোনো ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য ঐ সময় তথ্যদাতা কোথাও পড়াশোনা করতেন কি না, অথবা তখন তার বন্ধু বা খেলার সাথিরা কী করতেন তা জানতে পারি। এভাবে জিজ্ঞেস করে তথ্যদাতার বয়স সম্পর্কে ধারণা নিতে পারি। এ ধারণা থেকে আমরা হয়তো বুঝতে পারব, ঐতিহাসিক বিষয়ে তথ্য দেওয়ার মতো উপযুক্ত বয়স তখন তথ্যদাতার ছিল কি না।

তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণ করা যায়। যেমন: সাক্ষাৎকার, দলীয় আলোচনা, পর্যবেক্ষণ ইত্যাদি। আমরা এই তিনটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানব।

সাক্ষাৎকারদলীয় আলোচনাপর্যবেক্ষণ

 

 

সাক্ষাৎকার পদ্ধতিতে প্রশ্নমালার মাধ্যমে আমরা একজন তথ্যদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি।

এই পদ্ধতি ৫-৮ জন তথ্যদাতাকে নিয়ে একটি দল গঠন করে আমরা প্রশ্নমালার সাহায্যে উত্তর নিতে পারি।এই পদ্ধতিতে একটি পর্যবেক্ষণ লিস্ট তৈরি করে যে কোনো বিষয় পর্যবেক্ষণ করা হয়।

চলো, এখন তাহলে আমরা নবম শ্রেণির এক বন্ধু রাজু কীভাবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে তার এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন অনুসন্ধান করল তা জেনে নিই।

রাজুর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতি 

রাজু নিজ এলাকার সামাজিক উপাদানের পরিবর্তনকে তার বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু হিসেবে নির্ধারণ করল। এরপর সে সামাজিক উপাদান হিসেবে তার এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, যানবাহনের পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার পরিকল্পনা করল। সে ঠিক করল, এলাকার ২০ বছর আগের সামাজিক উপাদানগুলো কেমন ছিল এবং বর্তমানে কেমন তা জানবে। এই দুই অবস্থা সম্পর্কে জেনে সে পরিবর্তনগুলো নির্ণয় করবে। তাই সে এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর ও যানবাহনের পরিবর্তন-সম্পর্কিত প্রশ্ন সংবলিত একটি প্রশ্নমালা তৈরি করল। 

সে এলাকার চার জন বয়স্ক ব্যক্তির কাছে গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করল। তথ্য সংগ্রহের সময় করণীয় সব নীতিমালা সে অনুসরণ করল। চারজন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য নিয়ে সে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করল। তথ্য বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল প্রতিবেদন আকারে উপস্থাপন করল।

রাজুর লেখা প্রতিবেদন দেখতে ইচ্ছা করছে? চলো, তাহলে প্রতিবেদনটি দেখে নিই। এই প্রতিবেদনের মতো করে একটি প্রতিবেদন আমরাও লিখব।

দলীয় কাজ ২ 

এখন আমরা দলীয়ভাবে একটি অনুসন্ধান করব। আমরা এজন্য পূর্ব গঠিত দলের সবাইকে নিয়ে অনুসন্ধান করার পরিকল্পনা করব। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণ করে আমরা নিজ এলাকার প্রাকৃতিক বা সামাজিক উপাদানের পরিবর্তন অনুসন্ধান করব। এজন্য আমরা দলগতভাবে আলোচনা করে ঠিক করব প্রাকৃতিক না সামাজিক- কোন উপাদানের পরিবর্তন আমরা অনুসন্ধান করব। খেয়াল রাখতে হবে যেন ক্লাসের সবকটি দল প্রাকৃতিক বা সবকটি দল সামাজিক উপাদান বাছাই না করে। প্রয়োজনে শিক্ষকের সহায়তা নেব। 

এজন্য তথ্যদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহের আগে আমরা নিচের ছকের উত্তরগুলো দলে আলোচনা করে পূরণ করি।

ছক: অনুসন্ধানী কাজে তথ্য সংগ্রহের আগে করণীয়

প্রশ্ন

উত্তর

আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু কী?

 

 

আমাদের অনুসন্ধানের জন্য প্রশ্নগুলো কী?

 

 

প্রশ্নগুলো অনুসন্ধানের জন্য উপযোগী কি?

 

 

আমাদের অনুসন্ধানের তথ্যের উৎস কারা?

 

 

আমাদের অনুসন্ধানের তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি কোনটি?

 

 

আমাদের অনুসন্ধানের জন্য কত সময় ও বাজেট প্রয়োজন?

 

 

আমরা তথ্য সংগ্রহের সময় তথ্য দাতার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি কি?

 

 

তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা কাজ ভাগ করে নিতে পারি। যেমন: প্রত্যেকেই একজন তথ্যদাতার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। আবার জোড়ায় বা এক সঙ্গে গিয়েও তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। আমরা এটা দলে আলোচনা করে ঠিক করব কীভাবে তথ্য সংগ্রহ করব। সেইসঙ্গে আমরা দলীয় আলোচনার মাধ্যমে ৫-৬ জন তথ্যদাতার কাছ থেকে একসঙ্গে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি।

তথ্য সংগ্রহ করে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করব। কোন কোন তথ্য আমাদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তুর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তা যাচাই করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিতে হবে। সেইসঙ্গে তথ্যদাতাদের একই রকম উত্তরগুলো খুঁজে বের করে প্রতিবেদনে লিখতে হবে। তথ্য বিশ্লেষণ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে আমরা সম্মিলিতভাবে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করব।

দলীয় কাজ ৩ 

এবার আমরা আমাদের সংগৃহীত তথ্য থেকে এলাকার সামাজিক উপাদান বা প্রাকৃতিক উপাদান কীভাবে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে, তা আলোচনা করে নিচের ছক পূরণ করি।

 

 

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

 

সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট

 

সামাজিক উপাদান/প্রাকৃতিক উপাদান

 

 

 

 

  

'সেমিনার ও মুক্ত আলোচনা'

প্রতিটি দল অনুসন্ধানের মাধ্যমে নিজ এলাকার প্রাকৃতিক বা সামাজিক উপাদান কীভাবে ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট তৈরি করে তা অনুসন্ধান করেছে। আমরা আমাদের অনুসন্ধানের ফলাফল একটি সেমিনার আয়োজনের মাধ্যমে উপস্থাপন করব। আমরা পোস্টার পেপার, পাওয়ার পয়েন্ট ইত্যাদি মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারি। এই সেমিনারে উপস্থিত থাকার জন্য বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষককে আমন্ত্রণ জানাব। 

উপস্থাপন শেষে মুক্ত আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক ও সহপাঠীদের কাছ থেকে মতামত নিয়ে এলাকার প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান সংরক্ষণে মানুষের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে করণীয় নির্ধারণ করব।

প্রাকৃতিক ও সামাজিক উপাদান সংরক্ষণে করণীয়

  •  
  •  
  •  
  •  

 

প্রতিফলন ডায়েরি: আমরা একটি প্রতিফলন ডায়েরি তৈরি করব। যেখানে আমরা আমাদের অনুসন্ধানের কাজের সময় যা যা অভিজ্ঞতা হয়েছে তা লিখে রাখব। সেখানে আমরা দলগতভাবে কাজটি কীভাবে করেছি? কী কী করলে অনুসন্ধানী কাজটি আরো ভালো হতে পারত। দলের বন্ধুরা কে কোন কাজ করেছে? ইত্যাদি অভিজ্ঞতা সম্পর্কে আমরা প্রতিফলন ডায়েরিতে লিখব।

 

Content added By
Content updated By
Promotion